বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ এএম
যতই দিন যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতি ততই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। লুটপাট, অর্থপাচার এবং এন্তার দুর্নীতির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে পালিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে তলানিতে থাকা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই যাত্রা শুরু করতে হয়েছে। মানুষের আশা ছিল, হাসিনার বিদায়ের পর নতুন সরকারের সময় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, তাদের দুর্বিষহ জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে। তবে সরকারের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। বরং দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদন এটাই নির্দেশ করে, অর্থনীতির তেমন কোনো উন্নতি নেই। মানুষের দুর্ভোগ কমার আশু সম্ভাবনাও খুব কম। নতুন বছর সরকারকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে অর্থনীতির দৈন্যদশা মোকাবেলা করা নিয়ে। বেকারত্ব বৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হ্রাস, শিল্পকারখানা বন্ধ, উৎপাদন কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকাসহ অর্থনীতির এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
অর্থনীতি গতিশীল রাখতে হলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়াতে হয়। বিনিয়োগ না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত ও সচল হয় না। কর্মসংস্থানও হয় না। দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতির সব সূচক এখন নি¤œগামী। অর্থনীতি ধুঁকছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দিন দিন কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব মতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ ৮.৮ শতাংশ কমে গেছে। যদিও এ সময়ে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। তবে বিনিয়োগ কমার এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশে ডলারের যে সংকট তা রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাসে বিনিয়োগ বেড়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু বিদেশি বিনিয়োগই নয়, দেশি বিনিয়োগও হচ্ছে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীল পরিবেশ ও সুবিধা থাকা প্রয়োজন, তা খুবই অপ্রতুল। উল্টো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ ও হাঁসফাঁস চলছে। ব্যাংক সুদ ৭ শতাংশ বেড়ে ১৬ শতাংশ হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা মনে করছেন, সুদের হার বৃদ্ধির ফলে তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে গেছে। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে অনেকে খেলাপি হয়ে যাবেন। এতে নতুন বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্থবিরতা বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, সরকার নতুন করে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগেও নিরুৎসাহ সৃষ্টি হবে। এটা অর্থনীতির জন্য খারাপ লক্ষণ। বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকায় বেকারের সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। এছাড়া, বড় বড় প্রকল্পে অর্থ কাটছাঁট ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প স্থগিত রাখায় মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। বিবিএস-এর ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ৬০ হাজার হয়েছে। বছর ব্যবধানে ১ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। বেকারত্বের হার ৪.৪৯ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি হিসাবে যে বেকারত্বের সংখ্যা ও হার দেখানো হয়, তাতে শুভংকরের ফাঁকি থাকে। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর তার দোসরদের নানা ষড়যন্ত্রে শ্রমিক অসন্তোষ ও আন্দোলনের কারণে অনেক গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে অনেক শ্রমিক-কর্মকর্তা বেকার হয়ে গেছে। গার্মেন্ট খাতের অনেক বিদেশি অর্ডার বাতিল বা অন্যদেশে চলে গেছে। রফতানির এক নম্বর এই খাতে বড় ধরনের অভিঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, বেক্সিমকোর মতো বড় শিল্পগোষ্ঠীর কারখানা বন্ধ করে দেয়ায় অনেক শ্রমিক বেকার এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত থাকা ব্যবসায়ীরাও শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেয়া কিংবা সংকটের মধ্যে রয়েছে। শেয়ার বাজারের পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়ার পরিবর্তে প্রতিদিন মূল্যসূচক ও বাজারমূলধন কমছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাব মতে, গত পাঁচ মাসে মূল্যসূচক কমেছে ৮১৮ পয়েন্ট এবং মূলধন কমেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এ এক ভয়াবহ চিত্র। শেয়ারবাজার খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কমার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে মানুষের দুর্বিষহ জীবনে স্বস্তি আসার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রাজনীতি এবং অর্থনীতি দুটো ভিন্ন বিষয়। দেখা যায়, বিশ্বে দুই শত্রু দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থ বজায় রেখে তা চলমান রাখে। দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেও এটা করা হয়। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী এবং সরকারের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও অর্থনীতিতে পড়েছে। ওইসব ব্যবসায়ীরা যেমন ষড়যন্ত্র করে কারখানা বন্ধ রেখেছে, তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগের কারণেও বন্ধ হয়েছে। অনেকে নানা অনিশ্চয়তা ও সংকটের মধ্যে রয়েছে। বেক্সিমকোর মতো অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধারকে গ্রেফতার করায় এই প্রতিষ্ঠানে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার সেখানে নিজস্ব লোক বসানোয় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকার তা না করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিবার বা সদস্যদের কাউকে পরিচালনার দায়িত্ব দিলে প্রতিষ্ঠানটি গতিশীল থাকত এবং সরকারও তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারত। ব্যক্তির কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা স্থবির হতে পারে না। প্রতিষ্ঠান চলবে প্রতিষ্ঠানের মতো। সরকারের উচিৎ এ নীতি অবলম্বন করা। অর্থনীতিকে সবল করতে সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে বটে, তবে বাস্তবে তার ইতিবাচক প্রভাব কম পড়ছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, রিজার্ভ-র্যামিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিনিয়োগ হচ্ছে না, বেকারত্ব বাড়ছে, মানুষের আয় কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী, আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না, অভাব-অনটনের মধ্যে তাদের জীবন কাটছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও সমর্থন কমে যাবে। সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেও গণ্য হবে। অর্থনীতি সবল করতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগ বান্ধব ও ব্যবসার সহজ পরিবেশ সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের সমস্যা ও সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের খাত সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের কষ্ট লাঘবে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তা নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোয়ালন্দে পাখিদের নিরাপদ আবাসনে গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বসাচ্ছেন একদল যুবক
নভোএয়ার এর ১২ বছরের সাফল্য উদযাপন
ফরিদপুরে বিল্ডিংয়ের দরজার পাশে পড়েছিল কেয়ারটেকারের হাত-পা বাঁধা মরদেহ
ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি
আবারও অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে স্মিথ
‘৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবে’
বিএনপির ২২৭৬ নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে
ভোটার এবার আগের মত ভোট হবে না-মৌলভীবাজারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন
ইহুদি খ্রিস্টানদের স্বর্গরাজ্য পুড়ে ছাই হচ্ছে!
জালিয়াতির প্রশ্ন তুলে শিরোপা হারালেন মিস ইউনিভার্স
‘হাসিনা জানুয়ারিতে দেশে আসবেন দাবি সঠিক নয়’
বকশীবাজারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়: মামলার বিচারক
বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে : আমিনুল হক
১০ ঘণ্টা অবরোধের পর বকশীবাজার ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
ভাঙারি দোকানে আদালতের নথির বস্তা
অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সংঘর্ষ, ৫০ ছাগল পুড়ে অঙ্গার
‘ভ্যাট বাড়ানোর’ পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি
সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে
সুরমা নদীর তীরে জমে উঠেছে শীতকালীন সবজির হাট : প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বেচাকেনা
মন্দিরে প্রবেশে ফ্রি টোকেন পেতে হুড়োহুড়ি, পদদলিতে নিহত ৬